বাংলাদেশের যে কোন ব্যাংকে টাকা জমা দিলেই সাথে সাথে মোবাইল একটি এসএমএসে জানান দেয় আপনার টাকাটি সফলভাবে জমা হয়েছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছে। গ্রাহক নিশ্চিন্ত মনে বাড়ী ফিরে যান। কিন্তু যত বাধা বিপত্তি আর সমস্যা দাঁড়ায় সমবায় সমিতিতে। এখানে সকলেই প্রতিনিয়ত একটি অজানা আতঙ্কের মাঝে থাকেন। মালিকপক্ষ আতঙ্কে থাকেন এই বুঝি ফিল্ড কর্মীরা টাকা এনে অফিসে না দিয়ে নিজে খরচ করল। গ্রাহক আতঙ্কে থাকে এই কর্মীকে টাকা দিলে হয়ত তিনি অফিসে জমা না দিয়ে নিজে খরচ করবেন। এ সকল সকল দুশ্চিন্তা মুক্ত করতে “মাহফুজ আকন্দ” নামের এক অদম্য তরুণ তৈরি করেছেন” সমিতি কিপার” নামের এমন একটি সফটওয়্যার যা দিয়ে সকল দুশ্চিন্তা মুক্ত হচ্ছেন মালিকেরা এবং ব্যাংকের মতো টাকা জমা হওয়ার সাথে সাথে এসএমএস পেয়ে নিশ্চিন্তে মনে বাড়ি ফেরার ফিরছে গ্রাহকরা।
সফটওয়্যার টি তে রয়েছে একটি সমিতির যাবতীয় হিসাব নিকাশ সহ সকল প্রকার সুযোগ-সুবিধা ।যা ব্যবহার করলে খাতা কলম ছাড়াই মোবাইলের মাধ্যমে পরিচালনা করা যায় একটি সমিতির বিশাল প্ল্যাটফর্ম। এ ছাড়া সমিতির কিপার এর রয়েছে নিজস্ব অ্যাপস ,মা প্লে স্টোর থেকে সরাসরি ডাউনলোড করা যায়। রয়েছে ফেসবুক আইডি এবং সার্বক্ষণিক সেবার জন্য রয়েছে মেসেঞ্জার গ্রুপ।
এমন সেবা পেয়ে খুশি সমিতির মালিকেরা কারণ আগে যেখানে হিসাব-নিকাশের গরমিলের জন্য লাখ লাখ টাকা ক্ষতির সম্মুখীন হতে হতো সমিতির মালিকদের এখন এক প্লাটফর্মে পেয়ে মহাখুশি এসকল সমিতির মালিকেরা
নীলকন্ঠ সমবায় সমিতি এর সাধারন সম্পাদক বিদ্যুৎ চৌধুরী বলেন,
আমার সমিতিতে সমিতির ৮৩৩ জন গ্রাহকের হিসাব নিকাশ এবং রক্ষণাবেক্ষণ করতে গলদঘর্ম অবস্থা। ম্যানেজার সাহারুল এর সদস্যদের থেকে টাকা আদায় সহ অনন্যা কর্মীদের বেতন হিসাবে রাখা- দিন ক্লোজিং করা, একাউন্টসের কাজ সবমিলে দায়িত্ব যেন বোঝা হয়ে উঠছিল। কিন্তু মহাযন্ত্রণার সমাধান এখন হাতের মুঠোয়। কৃতিত্ব একটি সফটওয়্যার / অ্যাপের।
দৈনিক / মাসিক হিসাব সহ আয় ও ব্যয়ের হিসাব এবং সমিতি / এনজিওর প্রতি মাসের যাবতীয় আনুসাঙ্গিক বিলের হিসাব প্রস্তত করতে তৈরি হয়েছে সমিতি কিপার অ্যাপ।
সমিতি কিপার একটি ক্লাউড বেইজ অ্যাপ। যে কোন জায়গা থেকে মোবাইল, ল্যাপটপ, ট্যাব এবং ডেস্কটপ কম্পিউটার থেকে ব্যবহার করা যায়। এমনকি সমিতির গ্রাহকরাও নিজের একাউন্টের লগইন করতে পারে প্লে স্টোরে থাকা এপের মা্ধ্যমে।
খুলনার আশার আলো ফাউন্ডেশনের সভাপতি পূর্বাশা জামান উর্মি বলেন, আশার আলো ফাউন্ডেশন খুলনার একমাত্র সুদ মুক্ত একটি প্রতিষ্ঠান । সমিতির হিসাব নিকাশ রাখতে বড় বেগ পেতে হতো আমাদের। এখানকার মালিকপক্ষ রা অধিকাংশই বিদেশে থাকেন , অনেকের সাংবাদিক এবং বিভিন্ন পেশার সাথে জড়িত থাকায় সকলের সময় দিতে পারত না হিসাব-নিকাশ নিতে অফিসে আসতে পারত না। কিন্তু সমিতি কিপার এমন একটি সফটওয়্যার আমাদেরকে উপহার দিয়েছে যা দিয়ে আমাদের মালিকপক্ষ ফ্রান্সে এবং কানাডায় থেকেও আমাদের সকল যাবতীয় হিসাব নিকাশ দেখতে পারেন।
দৈনন্দিন কালেকশন, ঋণের হিসাব, শেয়ারের হিসাব, সঞ্চয় হিসাব, মাসিক সঞ্চয় হিসাব, ডিপিএস এর হিসাব, এফ ডি আর হিসাব, সিসি লোন এর মত ব্যাপার গুলো খুব সহজেই ম্যানেজ করা যায় এই সফটওয়্যার টি ব্যবহারের মাধ্যম।
এস এম এস এর মাধ্যমে নোটিফিকেশন পাঠানো যাবে। বাৎসরিক শেয়ার প্রফিট বিতরণ, সঞ্চয় এর উপরে প্রফিট বিতরণ, ডিপিএস এর উপর প্রফিট বিতরণ সহকারে প্রাতিষ্ঠানিক লাভ ক্ষতি কয়েকটি ক্লিকের মাধ্যমে সর্বশেষ আপডেট জানা যায়
মাঠকর্মীরা সরাসরি কি তাদের মোবাইল ফোনে থাকা অ্যাপস এর মাধ্যমে দৈনন্দিন কালেকশনগুলো করে ফেলতে পারবে। এতে করে সমিতির কাজ ৮০ শতাংশ কমে যায়। বছর শেষে অডিট রিপোর্ট সহ ৩০০ এর বেশি ধরণের রিপোর্ট সফটওয়্যার থেকেই আউটপুট নেয়া যায়। সফটওয়ারটি অডিট রিপোর্টে সমবায় অধিদপ্তর বা সমবায় আইন ফলো করে করা হয়েছে।
এক কথায় বলতে গেলে ম্যানুয়াল প্রসেসে সমিতি যে কাজগুলো করে সেটাকে যদি ১০০% ধরা হয় তাহলে সমিতি কিপার এই কাজের পরিধি কে ৩০% নামিয়ে আনবে।
এছাড়া সফটওয়ারটিতে রয়েছেন নানান সুবিধা,
মাসশেষে কনভেন্স বিল, স্টাফদের বেতন, বোনাস, রক্ষণাবেক্ষণ খরচ হিসাব করে অ্যাপটি স্বয়ংক্রিয়ভাবেই লাভ কিংবা ক্ষতির জানান দেয়। একাউন্টিং বিষয়ে জানাশোনা না থাকলেও চিন্তার কারণ নেই কারণ ব্যালেন্স সিট এই অ্যাপটিই তৈরি করে দিচ্ছে। সবমিলে সমিতি / এনজিওর ওয়ান-স্টপ-মেইন্টেনেন্স সার্ভিস প্লাটফর্মে পরিনত হচ্ছে এই অ্যাপটি।
ইতোমধ্যে বাংলাদেশ এর ৬৪ জেলাসহ দেশের বাইরের ৫০০+ সমিতি / এনজিও দৈনন্দিন ব্যবহার করছে সমিতি কিপার সিস্টেম টি।
ময়মনসিংহের কাচিঝুলি সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতির ম্যানেজার রতন বলেন, আগে সব সময় কয়েকটি লেজার খাতা নিয়ে ছুটতে হতো। আর সভা কক্ষে জমেছিল পুরনো লেজার বইয়ের স্তুপ। সবকিছু চলে এসেছে এখন হাতের মুঠোয়।
ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট বালুঘাট বাজার সমিতির আমিনুল ইসলাম জানান, দৈনিক হিসাব নিকাশ রাখতে খুব সমস্যা হতো তার আর ভুলও হত। অনেক সময় নষ্ট হত। কিন্তু বিশাল এক ঝামেলা থেকে মুক্তি দিয়েছে এই অ্যাপটি।
সর্বোপরি যে কথা না বললেই নয়,
সফটওয়্যার টি বাজারজাত করছে সফটওয়্যার বাজার বাংলাদেশ নামের প্রতিষ্ঠান। এর প্রতিষ্ঠাতা মাহফুজ আকন্দের গল্পটা বেশ অনুপ্রেরণাদায়ক। ২৭ বছর বয়সী মাহফুজ আকন্দ ইসলামিক স্টাডিজে পড়াশুনা করেও ক্যারিয়ার গড়েছেন আইটিতে। তৈরী করেছেন স্কুল কিপার / বিজনেস কিপার / ডিশ কিপার / ট্রান্সপোর্ট কিপার সহ সমিতি কিপার সফটওয়্যার। যার ব্যবহার এখন সারাদেশে।
তথ্যসূত্র: খুলনা ভিশন নিউজ 24